১২টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য, আটটি নিয়ে এখনও মতভেদ: চূড়ান্ত হচ্ছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে রাজনীতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে বেশ কিছু মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শেষে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে, যদিও আটটি বিষয়ে এখনও মতানৈক্য রয়ে গেছে।
✅ যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে:
১. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা: একজন ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন।
2. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন: অর্থবিল ও আস্থা ভোট ব্যতীত সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন। বিএনপি এই প্রস্তাবে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছে।
3. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নেতৃত্ব: ৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের মধ্যে আসনসংখ্যার অনুপাতে ভাগ করে দেওয়া হবে।
4. নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
5. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদানের নীতিমালা।
6. হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ এবং উপজেলায় নিম্ন আদালত স্থাপন।
7. সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি সংস্কার।
8. জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে নতুন নির্দেশনা।
9. প্রধান বিচারপতির নিয়োগপদ্ধতি।
10. ইসি গঠন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে: সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের সমন্বয়ে কমিটি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবে।
11. স্বাধীন পুলিশ কমিশন: পুলিশের পেশাদারিত্ব ও জনবান্ধবতা নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব।
12. দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী আলাদা হবেন: একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না—এই প্রস্তাবে তিন-চতুর্থাংশ দল একমত হলেও বিএনপি ভিন্নমত জানিয়েছে।
❌ যেসব বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি:
১. সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপদ্ধতি
২. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন ও উচ্চকক্ষের ক্ষমতা
৩. নারী সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ও নির্বাচনপদ্ধতি
৪. রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি
৫. সংবিধানের মূলনীতি
৬. তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা
৭. নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ
৮. রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতা
বিএনপি এই বিষয়গুলোতে আপত্তি জানিয়ে কিছু আলোচনায় অংশ নেয়নি বা ওয়াকআউট করেছে। বিশেষত, নিয়োগ কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির আপত্তি সবচেয়ে বেশি।
📄 সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ৭টি অঙ্গীকার:
১. জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি
২. সংবিধান ও আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন
৩. নির্বাচনের পর দুই বছরের মধ্যে সংস্কার সম্পন্নের অঙ্গীকার
৪. সনদের প্রতিটি ধাপ আইনি ও সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত করা
৫. বাস্তবায়নে পূর্ণসংখ্যক দলীয় প্রতিশ্রুতি
৬. আইনগত ও সাংবিধানিক প্রতিরক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা
৭. গণ–আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে স্বীকৃতি
🗨️ বিশ্লেষকের মত:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান মনে করেন, সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে এখনো মতপার্থক্য থাকলেও জুলাই সনদ নির্বাচনের রূপরেখা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। তবে এই সনদ বাস্তবায়নে বাধ্যতামূলক না হলে প্রতিশ্রুতি দিয়েও দলগুলো তা বাস্তবায়ন না করার ঝুঁকি থাকবে।
#জুলাই_জাতীয়_সনদ_২০২৫ #রাজনৈতিক_সংস্কার #বাংলাদেশ_সংবিধান #জাতীয়_ঐকমত্য_কমিশন #সংসদ_সংস্কার #রাজনীতি_বাংলাদেশ #নির্বাচন_সংস্কার #BNP #AwamiLeague #সংবিধান_৭০_অনুচ্ছেদ #ইসি_গঠন
0 Comments