📉 ছাপানো টাকায় ঋণ: সরকারের ২৭ হাজার কোটি টাকার দায় এবং এর প্রভাব

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় সরকারের ঋণ গ্রহণ। বিদায়ী অর্থবছরের শেষ দিকে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এই পদক্ষেপ নিয়ে অর্থনীতি বিশ্লেষক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে—এই ঋণের প্রয়োজন কেন, এর প্রভাব কতটা ভয়াবহ এবং ভবিষ্যতে অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে?

🏦 কেন এই ঋণ নেওয়া হলো?

সরকার বলছে, এটি নতুন ঋণ নয়। বরং আগের পরিশোধ করা ঋণের সমপরিমাণ অর্থ তারা আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়েছে, কারণ অর্থবছরের শেষ দিকে সরকারের হিসাবের ঘাটতি দেখা দেয়। রাজস্ব আয় আশানুরূপ না হওয়ায় সরকার বিকল্প অর্থায়নের পথ খুঁজতে বাধ্য হয়। এ কারণে পূর্বে পরিশোধ করা অর্থ আবার অন্য খাতে ব্যবহার করার জন্য তুলে নেওয়া হয়।

📈 অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী?

ছাপানো টাকা মূলত “হাইপাওয়ার্ড মানি” নামে পরিচিত। এর একটি টাকা বাজারে দ্বিগুণ বা তারও বেশি মুদ্রা প্রবাহ ঘটায়। এর ফলে:

💹 মূল্যস্ফীতি বাড়ে

🛒 পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পায়

💰 টাকার মান কমে যায়

২০২৫ সালের মে-জুন মাসের মধ্যে সরকারের এই ঋণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যায়। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি বেড়ে ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

🧨 অতীত অভিজ্ঞতা কী বলে?

আওয়ামী লীগের শাসনামলে (সাড়ে ১৫ বছরে) ছাপানো টাকায় সরকারের মোট ঋণ ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর প্রভাবে ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১.৬৬% এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪%-এর উপরে উঠে যায়। জনগণ তখন ব্যাপকভাবে ভোগান্তির শিকার হয়।

🔁 পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় ঋণ নেওয়া সীমিত করেছে।

তবে রাজস্ব ঘাটতি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য সংকটে আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিছু ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য নিচের বিষয়গুলো জরুরি:

✅ রাজস্ব আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি

✅ বাজেট খরচে স্বচ্ছতা ও কৃচ্ছ্র সাধন

✅ ব্যাংক খাত সংস্কার

✅ মুদ্রানীতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ

✍️ উপসংহার

সরকারের ঘাটতি পূরণে ছাপানো টাকায় ঋণ নেওয়া হয়তো একটি তাৎক্ষণিক সমাধান, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সংকটে ফেলতে পারে। সরকারকে এখন প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা এবং

 স্বচ্ছতা বজায় রেখে কার্যকর অর্থনৈতিক সংস্কার গ্রহণ।